মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের নামে বিতর্কিত এনজিও ‘রিসডা বাংলাদেশ’ কর্তৃক অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে দায়সারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চৌমুহুনী এলাকায় সাকিব-সিহাব ভবনের ২য় তলায় কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে দায়সারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে বরাদ্দের সিংহভাগই লুঠে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে রিসডা বাংলাদেশ। দাতা সংস্থা ইউনিসেফ ও সরকারী কোন সংস্থার তদারকী না থাকায় পেকুয়ায় রিসডা বাংলাদেশ যেনতেনভাবে দায়সারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে রিসডা বাংলাদেশের পেকুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে নানান অনিয়ম ও অবব্যস্থাপনার চিত্রের সত্যতা পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বিতর্কিত এনজিও ‘রিসডা বাংলাদেশ’ ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগীতায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে টেইলারিং (দর্জি) ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রক্ষিনের নামে গত কয়েক মাস পূর্বে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী নামের একটি প্রকল্প চালু করে। দুইটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে দাতা সংস্থা ও সরকারের নিয়ম মানেননি রিসডা বাংলাদেশ। টেইলারিং (দর্জি) প্রশিক্ষণের জন্য ১২০ জন ছাত্রীকে তারা ভর্তি করিয়েছেন। এখানে ঝরে পড়া দরিদ্র অনগ্রসর ছাত্রীদের ভর্তি করা হয়নি। ভর্তিকৃত অধিকাংশ ছাত্রীই পেকুয়া সদরে অবস্থিত আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত নিয়মিত ছাত্রী। ৬০ জন ছাত্রীকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেইলারিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রিসডার পেকুয়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে সেলাই মেশিন রয়েছে ১২টি। আর ৬০ জন ছাত্রীকে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নামমাত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১২ টি সেলাই মেশিন দিয়ে দায়সারা ট্রেনিং দিচ্ছে ওই সংস্থা। প্রতিজন প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতি মাসে ৮শত টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। গত তিন মাসের দুই হাজার ৪ শত টাকা করে কিছু প্রশিক্ষণার্থীকে বৃত্তির টাকা প্রদান করা হলেও অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থীকে এখনো বৃত্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীদের সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, রিসডার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সকালে যে সব ছাত্রী প্রশিক্ষণে অংশ নেন তারা সবাই মাদ্রাসার ক্লাস ফাঁকি দেয়। টেইলারিং ট্রেডে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রকল্পের নিয়ম মানা হয়নি। আর মোবাইল সার্ভিসিং ট্রেডে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কক্ষে কোন প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি নাই। দায়সারাভাবে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত তিন মাস পূর্বে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করলেও ৬ মাস পূর্বে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে মর্মে চলতি জানুয়ারী মাসে ভর্তিকৃত ব্যাচের সমাপনী অনুষ্টান সম্পন্ন করে নতুন ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করিয়ে আবারো প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুরু করার জন্য তোডজোড় শুরু করেছে রিসডা বাংলাদেশ।
কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, বিতর্কিত এনজিও রিসডা কর্মকর্তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তদারকি করেনা। একরামুল হক নামের এক ব্যক্তি টেকনিক্যাল অফিসার পদে পেকুয়ায় নামেমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে রিসডা বাংলাদেশ নামেমাত্র প্রশিক্ষণ সেন্টার খুলে ইউনিসেফের টাকা লুটপাট করছে।
অভিযোগের ব্যাপারে রিসডা বাংলাদেশের পেকুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের টেকনিক্যাল অফিসার একরামুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চলতি ব্যাচে শুরু করার সময় বেশ তড়িগিড়ি করে শুরু কয়েছে। মাদ্রাসায় নিয়মিত অধ্যায়নরত ছাত্রীরা তথ্য গোপন করে ভর্তি হয়েছে। তবে নতুন ব্যাচ ভর্তির সময় নিয়ম মেনেই ঝরে পড়া ছাত্রীদের ভর্তি করা হবে। তিনি আরো জানান, নিয়ম মেনেই রিসডার কার্যক্রম পেকুয়ায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম করা হচ্ছেনা।
পাঠকের মতামত: